হারিয়ে যাওয়া শহর
আর্ন্তজাতিক ডেস্ক:
দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তরে, নামিবিয়ার পূর্বে আর প্রায় পুরো বতসোয়ানা জুড়ে কালাহারি মরুভূমির অবস্থান। বুশম্যান আর হটেনটট উপজাতির বসবাস এখানে। তাদের বিশ্বাস, একসময় এই মরুভূমিতে ছিল এক সমৃদ্ধ শহর। যে শহরে শিশুরা খেলা করত হীরের টুকরো দিয়ে।
কালাহারির হারিয়ে যাওয়া শহরের কথা বলতে গেলে যার নাম প্রথমে উঠে আসে তিনি হলেন উইলিয়াম লিওনার্ড হান্ট, জন্ম নিউ ইয়র্কে। তরুণ বয়সে সরু দড়ির উপর দিয়ে নায়াগ্রা ফলস পার হয়ে খ্যাতি লাভ করেন। তারপর ফারিনি ছদ্মনাম ধারণ করে দেশে বিদেশে অনুষ্ঠান করে বেড়াতে থাকেন। লন্ডনে আফ্রিকান উপজাতিদের নিয়ে কাজ করার সময় বুশম্যানদের কাছে শোনেন হারিয়ে যাওয়া শহর আর হীরের খনির সেই সব উপকথা। আফ্রিকার দক্ষিণে অভিযান চালিয়ে ১৮৮৫ সালে খুঁজে পান কালাহারির হারিয়ে যাওয়া শহরের ধ্বংসাবশেষ।
লন্ডনে ফিরে এসে লেখেন ‘কালাহারির মরুভূমিতে’ নামে একটি বই। রয়েল জিয়োগ্রাফিক সোসাইটি ও বার্লিন জিয়োগ্রাফিক সোসাইটিতে পাঠান তথ্য উপাত্ত। ফারিনির বর্ণনামতে একটির উপর আরেকটি পাথর সাজিয়ে বিশাল এই শহরটি নির্মাণ করা হয়েছিল। ভূমিকম্পের পরে চীনের মহাপ্রাচীর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলে যেরূপ ধারণ করবে, শহরটির অবস্থা এখন অনেকটা সেরকম। শহরটির ধ্বংসস্তূপের কিছু অংশ এখনো মাটির নিচে তলিয়ে আছে। ধ্বংসস্তূপের কিছু অংশ খনন করে ছয় মিটার চওড়া একটি পথের সন্ধান পান তিনি। তবে কোন শিলালিপি বা গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন খুঁজে পাওয়া যায় নি। ফারিনির মতে ধ্বংসস্তূপটি হাজার বছর পুরনো কোন শহরের। শহরটিকে নিয়ে একটি কবিতাও লিখেন তিনি।
ফারিনির পর অনেক হারিয়ে যাওয়া এ শহরটিকে নিয়ে সবার আগ্রহের সৃষ্টি হয়। ১৮৬৪ সালে প্রফেসর এ জে ক্লিমেন্ট দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তরের শহর রেইটফনটেইনের কাছে এক অদ্ভুত পাহাড় খুঁজে পান। স্থানীয় ভাবে এগুলোকে ডিম্বাকৃতি পাহাড় বলা হয়। ‘কালাহারি ও হারিয়ে যাওয়া শহর’ বইয়ে তিনি এ পাহারকে পাথর দিয়ে নির্মিত এম্ফিথিয়েটারের ধ্বংসাবশেষ বলে বর্ণনা করেন।
এ শহরটি কেমন ছিল, কারা এটি নির্মাণ করেছিল, কিভাবে ধ্বংস হল- সেসব তথ্য আজ অজানাই রয়ে গেছে। আবার অনেকে প্রশ্ন তোলেন, আদৌ কালাহারিতে কোন শহর ছিল কি? নাকি পাথরগুলো প্রাকৃতিকভাবেই এমন যে এগুলোকে হারিয়ে যাওয়া কোন শহরের ধ্বংসস্তূপ বলে ভ্রম হয়?
প্রতিক্ষণ/এডি/নাজমুল